ইরানের রাজধানী তেহরানে পার্কে কুকুর নিয়ে হাঁটা যাবে না। সম্প্রতি এটাকে অপরাধ বলে ঘোষণা করেছে পুলিশ। জনসাধারণের নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিধিনিষেধ প্রয়োজনীয় বলেও ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরানের পার্লামেন্টও শিগগিরই একটি বিল অনুমোদন করতে যাচ্ছে- যার ফলে সারাদেশেই কুকুর, বিড়ালের মতো পোষা প্রাণী রাখা অপরাধ হয়ে যাবে।
প্রস্তাবিত আইনের বিধান অনুসারে, পোষা প্রাণীকে কেবলমাত্র তখনই বাড়িতে রাখা যাবে যদি এর জন্য গঠিত বিশেষ কমিটির কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হয়।
এ আইন অনুসারে, বিড়াল, কচ্ছপ, খরগোশের মতো অনেক প্রাণীর আমদানি, বিক্রয়, পরিবহন ইত্যাদির জন্য ন্যূনতম ৪০০ মার্কিন ডলার জরিমানাও করা যেতে পারে।
ইরানের গ্রামগুলোতে কুকুর পালন সবসময়ই খুবই সাধারণ একটি বিষয় ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে শহুরে জীবনধারাতেও সেটি খুবই পরিচিত দৃশ্য হয়ে ওঠে।
১৯৪৮ সালে ইরান যখন প্রাণী কল্যাণ আইন প্রণয়ন করেছিল, তখন পশ্চিম এশিয়ার মাত্র কয়েকটি দেশেই ওই ধরনের আইন হয়েছে। এরপর সরকার পশু অধিকার প্রচারে দেশের প্রথম একটি সংস্থা তৈরি করতে সহায়তা করে। এমনকি দেশটির রাজ পরিবারেও পোষা কুকুর ছিল। ১৯৭৯ সালে সংঘটিত বিপ্লব দেশটিতে অনেক পরিবর্তন এনে দেয়। বিপ্লবের পর গঠিত নতুন সরকারের দৃষ্টিতে কুকুর ‘পাশ্চাত্যায়নের’ প্রতীক হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় সেখানকার কর্মকর্তারা এই প্রবণতা ঠেকানোর চেষ্টা শুরু করেন।
তেহরানের পশুচিকিৎসক আশকান শেমিরানি বলেন, কুকুর পোষা নিয়ে কথনও আলাদ করে কোনো নিয়ম ছিল না। তার মতে, কুকুর নিয়ে হাঁটলে বা গাড়িতে কুকুর রাখলে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। পুলিশ এটা করছে, কারণ পুলিশ মনে করে, এই কুকুর পোষার বিষয়টা পশ্চিমাকরণের লক্ষণ।
আশকান শেমিরানি বলেন, সরকার কুকুরের জন্য একটি কারাগারও তৈরি করেছে। আমরা সেই কারাগারের অনেক ভয়ঙ্কর গল্প শুনেছি। সেখানে কুকুরগুলোকে অনেক দিন খোলা জায়গায় রাখা হয়েছিল পর্যাপ্ত খাবার বা পানি ছাড়াই। সেখানে কুকুরের মালিকরা সব রকমের আইনি ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছিলেন।
প্রস্তাবিত আইন শুধুমাত্র কুকুরকে লক্ষ্য করে করা হচ্ছে না, বিড়ালও এর অংশ। এই আইনে কুমিরের কথাও বলা হয়েছে। ইরান ‘পার্সিয়ান বিড়ালের’ জন্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত। এই বিড়াল বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বিড়াল প্রজাতির একটি।
ইরানি ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ডক্টর মোহেবি প্রস্তাবিত আইনকে লজ্জাজনক আখ্যায়িত করেছেন।